XtGem Forum catalog
religion.mywibes.com
~* ওঁ নম ভগবতে বাসুদেবায় *~
শ্রীমদ্ভগবদগীতা
চতুর্থ অধ্যায়ঃ জ্ঞানযোগ শ্লোক ৪২
এই জ্ঞানযোগ পূর্বে আমি সূর্যকে বলেছিলাম। সূর্য নিজ পুত্র মনুকে বলেছিলেন। এবং মনু ইক্ষুকে এটি বলেছিলেন।১ পরম্পরাক্রমে রাজর্ষিগণও এই জ্ঞান লাভ করলেন। কালক্রমে এটি নষ্ট হয়ে গেল।২ হে অর্জুন জ্ঞানযোগ অত্যন্ত গোপনীয় বিষয়। তুমি আমার ভক্ত ও সখা। সেইজন্যই আমি তোমাকে এই জ্ঞান জানাচ্ছি।৩ অর্জুন বললেন- হে কৃষ্ণ, আগে সূর্যের জন্ম, পরে তোমার জন্ম। তুমি কীভাবে সূর্যকে এই জ্ঞান শিক্ষা দিলে।৪ শ্রীকৃষ্ণ বললেন- হে অর্জুন, তোমার এবং আমার বহুজন্ম অতীত হয়েছে। আমার মনে আছে কিন্তু সেই সকল তোমার মনে নেই।৫ আমার জন্ম নেই, মৃত্যু নেই। আমি সর্বভূতের ঈশ্বর। আমি নিজের মায়া বলে শরীর ধারণ করে থাকি।৬ পৃথিবীতে যখনই ধর্মের গ্লানি হয় এবং পাপ বৃদ্ধি পায়, তখনই আমি শরীর ধারণ করে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হই।৭ আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হয়ে সাধুদিগের পরিত্রাণ, পাপিদের বিনাস এবং ধর্ম সংস্থাপন করি।৮ যে ব্যক্তি আমার এই দিব্য জন্ম ও কর্মের কথা জানে সে ব্যক্তি মৃত্যুর পর আমাকে প্রপ্ত হন। তাঁহার আর পুনর্জন্ম হয় না।৯ যে ব্যক্তি আসক্তি, ভয় ও ক্রোধ ত্যাগ করে আমার শরণাপন্ন হয়, সে আমার ভাব প্রাপ্ত হয়। তার পাপ থাকে না।১০ হে অর্জুন, যে ব্যক্তি যেভাবে আমার ভজন করে, সেই ব্যক্তিকে আমি সেইভাবে তুষ্ট করি।১১ যে ব্যক্তি দেবতার পূজা করে সিদ্ধি লাভ করতে চায়, সে তা দ্বারাই সিদ্ধিলাভ করে। কিন্তু সেই ব্যক্তি মুক্তি লাভ করতে পারে না।১২ আমি গুণ ও কর্ম অনুসারে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র- এই চার বর্ণ সৃষ্টি করেছি। কিন্তু আমাকে অকর্তা ও অব্যয় বলেই জেনো।১৩ আমি কর্ম করি কিন্তু আমি কর্মে লিপ্ত হই না। কর্ম ফলেও আমার স্পৃহা নেই। যারা এটি জানে তারা কর্ম বন্ধন হতে মুক্ত হয়।১৪ পূর্বযোগীগণ এটি জেনে কর্ম করতেন। তুমিও তাঁদের মতই কর্ম করবে।১৫ কর্ম অকর্মের বিচার করতে গিয়ে অনেক কর্মী অনেক ভুল করে থাকে। তাই তোমাকে কর্মতত্ত্ব বলছি।১৬ কর্ম, অকর্ম ও বিকর্ম- কর্মের এই তিন গতি। সে সম্বন্ধে উপদেশ দিচ্ছি।১৭ যে ব্যক্তি কর্মে অকর্ম এবং অকর্মে কর্ম দেখে সেই ব্যক্তিই প্রকৃত কর্মী। তিনিই বুদ্ধিমান।১৮ যে কর্মী কামনা ত্যাগ করে কর্ম করে, জ্ঞানবলে তারা কর্মদগ্ধ হয়। সেই কর্মী পণ্ডিত ব্যক্তি।১৯ তিনি আত্মতৃপ্ত ও নিরাশ্রয়। কামনা ছেড়ে কর্ম করেন বলে তিনি কর্ম করেও কর্ম করেন না। অর্থাত্‍ কর্মে লিপ্ত হন না।২০ নিষ্কাম, সংযত ও পরিগ্রহত্যাগী ব্যক্তি দেহরক্ষার জন্য কর্ম করেও পাপভাগী হন না।২১ সামান্য লাভে সন্তুষ্ট, ঈর্ষা, দ্বন্দ্বহীন এবং লাভ-অলাভে সমজ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি কর্ম করেও কর্মের আধীন হন না।২২ নিষ্কাম ও রাগ-দ্বেষাদিবর্জিত জ্ঞানী ব্যক্তি যজ্ঞ করলেও তার সর্বকর্ম লয় পায়।২৩ যে ব্যক্তি অগ্নি হবিঃ (হোমের দ্রব্য) এবং যজ্ঞ সকলেকেই ব্রহ্মময় মনে করেন তার সমস্তই ব্রহ্মে লয় পায়।২৪ কর্মযোগী শ্রদ্ধার সাথে দৈবযজ্ঞ করেন। আর ফল ত্যাগী জ্ঞানী ব্রহ্মাকেই যজ্ঞ করেন।২৫ কেউ ইন্দ্রিয়গণকে সংযমরূপ অগ্নিতে অর্পণ করে। আর কেউ বিষয়কে ইন্দ্রিয়রূপ অগ্নিতে অর্পণ করে।২৬ কেউ বা জ্ঞানের প্রভাবে আত্মসংযমরূপ অগ্নিতে ইন্দ্রিয়, মন প্রভৃতি দগ্ধ করে।২৭ কোন কোন কর্মী দ্রব্যাদি দানরূপ কর্ম করেন, কেউ তপস্যারূপ যজ্ঞ করেন, কেউ যোগ আভ্যাসরূপ যজ্ঞ করেন এবং কেউ বা বেদ পাঠরূপ যজ্ঞ করে থাকেন।২৮ কেউ প্রাণবায়ুতে আপন বায়ু এবং আপনবায়ুতে প্রাণবায়ু রূদ্ধ করে প্রণায়াম অভ্যাস করেন এবং তা দ্বারা ব্রহ্মের আরাধনা করেন।২৯ কোন মিতাহারী ব্যক্তি প্রাণেই প্রাণাহুতি দেন। সেই ব্যক্তিই যজ্ঞবিদ। তিনি নিষ্পাপ।৩০ যজ্ঞের শেষে অমৃত ভোজন করে যজ্ঞবিদ ব্যক্তি অন্তিমে ব্রহ্মলাভ করেন।৩১ বেদে বহু যজ্ঞের বর্ণনা আছে। সেই সকল যজ্ঞ কর্মজনিত; এটি জেনে মুক্ত হওয়া যায়।৩২ হে অর্জুন, দ্রব্যযজ্ঞ হতে জ্ঞানযজ্ঞ বড়। জ্ঞানের দ্বারা কর্মের শেষ হয়।৩৩ তুমি প্রণাম, সেবা ও প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলে তত্ত্বজ্ঞানী ব্যক্তি তোমাকে জ্ঞান উপদেশ দিবেন।৩৪ সেই জ্ঞান লাভ করে তোমার মোহ দূর হবে। তখন আমার মধ্যে এবং তোমার নিজের মধ্যেই ভূতগণকে দেখতে পাবে।৩৫ আর তুমি যদি পাপাচারী হয়ে পড়, জ্ঞানতরী আরোহণ করে তুমি পাপসিন্ধু পার হতে পারবে।৩৬ হে অর্জুন, জ্বলন্ত আগুন যেমন কাঠকে দগ্ধ করে জ্ঞানরূপ আগুনও সেইরূপ সমস্ত কর্ম নষ্ট করে।৩৭ জ্ঞানের মত পবিত্র আর কিছু নেই। কর্মযোগী যথাকালে আত্মজ্ঞান লাভ করেন।৩৮ শ্রদ্ধাবান, জিতেন্দ্রিয়, ব্রহ্মনিষ্ঠ ব্যক্তি জ্ঞান লাভ করে মুক্তি লাভ করেন।৩৯ যে ব্যক্তি শ্রদ্ধাবান হয়েও সংশয়মুক্ত হয় না, সে মূর্খ। সে ব্যক্তির ইহলোকে পরলোকে সুখ লাভ হয় না।৪০ যে কর্মী জ্ঞানে ভ্রান্তিহীন হয়ে নিষ্কাম কর্ম করে, সে আত্মজ্ঞ। সে কর্ম করলেও কর্মে আবদ্ধ হয় না।৪১ হে অর্জুন, জ্ঞানরূপ অস্ত্রের দ্বারা সন্দেহ দূর কর। নিষ্কাম কর্ম কর, ওঠ।৪২
  Home
Log in