Insane
religion.mywibes.com
~* ওঁ নম ভগবতে বাসুদেবায় *~
শ্রীমদ্ভগবদগীতা
mahabharata
প্রথম অধ্যায়ঃ অর্জুন-বিষাদযোগ শ্লোক ৪৬
ধৃতরাষ্ট্র বললেন -হে সঞ্জয়, ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে আমার পুত্রগণ এবং পাণ্ডুর পুত্রগণ যুদ্ধের জন্য সমবেত হয়ে কী করলেন?১ সঞ্জয় বললেন -তখন রাজা দুর্যোধন পাণ্ডব সৈন্যদেরকে ব্যূহাকারে সজ্জিত দেখে দ্রোণাচার্যের নিকট গিয়ে বললেন।২ গুরুদেব, আপনার ধীমান শিষ্য দ্রুপদপুত্র কর্তৃক ব্যূহবদ্ধ পাণ্ডবদের এই বিশাল সৈন্য দেখুন।৩ এই সৈন্যদলে ভীমার্জুনের সমান বীরগণ আছেন। সাত্যকি, বিরাট ও বীর দ্রুপদ আছেন।৪ এই সৈন্যদলে ধৃষ্টকেতু চেকিতান, বীর কাশীরাজ কুন্তিভোজ পুরুজিত্‍, নরশ্রেষ্ঠ শৈব্য আছেন।৫ আর আছেন -পরাক্রমশালী যুধামন্য, বীর উত্তমৌজা, সুভদ্রাপুত্র অভিমন্যু ও দ্রৌপদি পুত্রগণ। এরা সকলেই বীর।৬ হে দ্বিজশ্রেষ্ঠ, আমার সৈন্যদলের প্রধান সেনানায়কদের নাম বলছি শুনুন।৭ এখানে আপনি, ভীষ্ম, কর্ণ, যুদ্ধজয়ী কৃপা, অশ্বত্থমা, বিকর্ণ, সোমদত্ত পুত্র ও জয়দ্রথ আজেন।৮ আরো অনেক বীর আছেন। তাঁরা সকলেই অস্ত্রধারী বীর ও যুদ্ধে পারদর্শী। সকলেই আমার জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত।৯ ভীষ্মকর্তৃক রক্ষিত আমাদের সৈন্য অসংখ্য। আর ভীমকর্তৃক রক্ষিত পাণ্ডবদের সৈন্য অতি অল্প।১০ আপনারা সকলেই নিজ নিজ বিভাগানুসারে ব্যূহ প্রবেশপথসমূহে থেকে ভীষ্মকে রক্ষা করুন।১১ তখন কুরুবৃদ্ধ পিতামহ ভীষ্ম সিংহনাদ করে শঙ্খধ্বনি করলেন। তা শুনে দুর্যোধন আনন্দিত হলেন।১২ তখন শঙ্খ, শিঙ্গা, ঢাক, ঢোল ও নাগরা বাজল। সেই শব্দ তুমুল হয়ে উঠল।১৩ তারপর শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুন সাদা ঘোড়ার রথে বসে দিব্য শঙ্খ বাজালেন।১৪ অর্জুন \'দেবদত্ত\' নামক শঙ্খ ও শ্রীকৃষ্ণ \'পাঞ্চজন্য\' নামক শঙ্খ এবং ভীমসেন \'পৌণ্ড্র\' নামক শঙ্খ বাজালেন।১৫ রাজা যুধিষ্ঠির \'অনন্তবিজয়\' নামক শঙ্খ নকুল \'সুঘোষ\' নামক শঙ্খ এবং সহদেব \'মণিপুষ্প\' নামক শঙ্খ বাজালেন।১৬ ধৃষ্টদ্যুম্ন, শিখণ্ডী, কাশিরাজ, সাত্যকি ও বিরাট নিজ নিজ শঙ্খ বাজালেন।১৭ মহাযোদ্ধা অভিমন্যু এবং বীরগণও নিজ নিজ শঙ্খ বাজালেন।১৮ সেই তুমুল শব্দে কৌরবদের প্রাণ বিদীর্ণ করতে লাগল।১৯ কৌরবগণকে যুদ্ধের জন্য উদ্যত দেখে অর্জুন ধনু তুলে শ্রীকৃষ্ণকে বললেন।২০ অর্জুন বললেন -উভয় পক্ষের সেনার মধ্যে আমার রথ স্থাপন কর।২১ কাদের সাথে আমাকে যুদ্ধ করতে হবে তা দেখে নিই।২২ আর যারা দুষ্টমতি দুর্যোধনের মঙ্গল সাধন করতে এসেছে তাদেরকে দেখব।২৩ সঞ্জয় বললেন -অর্জুনের কথা শুনে শ্রীকৃষ্ণ উভয় সেনার মধ্যে রথ স্থাপিত করে অর্জুনকে বললেন।২৪ শ্রীকৃষ্ণ বললেন -হে অর্জুন, ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণ, প্রভৃতি কুরুপক্ষীয় যোদ্ধাগণকে চেয়ে দেখ।২৫ অর্জুন গুরুজন, পিতামহ, মাতুল, শ্বশুর এবং বন্ধুগণকে দেখলেন।২৬ তাঁদের সকলকে বিপক্ষে দেখে দয়াযুক্ত হয়ে দুঃখিত মনে শ্রীকৃষ্ণকে বললেন।২৭ অর্জুন বললেন -হে কৃষ্ণ আত্মীয়গণকে বিপক্ষে যুদ্ধের জন্য উপস্থিত দেখে আমার মুখ শুকিয়ে গেছে ও শরীর বিকল হয়েছে।২৮ আমার শরীর কাঁপছে ও রোমহর্ষ হচ্ছে। আমার হাত হতে ধনু খসে পড়ছে, গা জ্বলছে।২৯ হে কৃষ্ণ, আমার মাথা ঘুরছে। আমি সব বিপরীত লক্ষণ দেখছি।৩০ আত্মীয়গণকে মেরে মঙ্গল হবে না। হে কৃষ্ণ, আমি জয় চাই না এবং রাজ্য, সুখ, ধনও চাই না।৩১ হে কৃষ্ণ, যাদের জন্য রাজ্য ভোগ ও প্রাণ, সেই আত্মীয়গণকে মেরে কী লাভ।৩২ গুরু, পিতামহ ভীষ্ম ও আত্মীয়গণ সকলে যুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন দিতে উপস্থিত হয়েছেন।৩৩ মাতুল, শ্বশুর, শ্যালকাদি সকলে প্রাণ দিতে এসেছেন। তাঁরা আমাদের মারুক আপত্তি নাই, কিন্তু আমি তাঁদেরকে মারতে পারব না।৩৪ তাঁদেরকে বধ করে ত্রিভূবন লাভ করলেও কোনো ফল হবে না।৩৫ কৌরবগণকে বধ করে বিন্দুমাত্র শান্তি হবে না। আততায়ী হলেও তাঁরা আপনজন জ্ঞাতি। হে কৃষ্ণ, জ্ঞাতিগণকে বধ করে আমি সুখি হতে পারব কি?৩৬ লোভের বশে তাঁরা হিতাহিত চিন্তা করতে পারছে না। আপনজনের সাথে বিবাদে কুলক্ষয় হয়। কুলক্ষয় হলে ভীষণ পাপ হয়।৩৭ হে কৃষ্ণ, আমরাও জানি যে, এই যুদ্ধে বংশনাসেরই সম্ভাবনা। তবে এই যুদ্ধে বিরত হব না কেন?৩৮ বংশ নষ্ট হলে কুলধর্ম নষ্ট হয়। কুলধর্ম নষ্ট হলে অধর্ম ঘটে।৩৯ অধর্ম ঘটলে কুলনারীগণ চরিত্রহীন হয়। কুলনারীগণ চরিত্রহীন হলে বর্ণ সঙ্কর জন্মে।৪০ বর্ণসঙ্করের জন্য কুলনাশকারীরা ও কুল নরকে যায়। জল পিণ্ডের অভাবে পিতৃপুরুষ নরকে পতিত হন।৪১ বর্ণসঙ্কর জন্মিলে কুলধর্ম ও জাতিধর্ম নষ্ট হয়।৪২ কুলধর্ম নষ্ট হলে নরকে বাস হয়। হে কৃষ্ণ, এটি তো শাস্ত্রের বচন।৪৩ রাজ্য ও সুখভোগের লোভে আমরা মহাপাপ করতে বসেছি।৪৪ হে কৃষ্ণ, কৌরবগণ যদি অস্ত্রহীন আমাকে বধও করে তাও মঙ্গলের কারণ হবে।৪৫ সঞ্জয় বললেন- শোকাকুল অর্জুন এই কথা বলে ধনুর্বাণ ত্যাগ করে রথের উপর বসে পড়লেন।৪৬
Home
Log in