religion.mywibes.com
~* ওঁ নম ভগবতে বাসুদেবায় *~
শ্রীমদ্ভগবদগীতা
তৃতীয় অধ্যায়ঃ কর্মযোগ
শ্লোকঃ ৪৩
অর্জুন বললেন- হে কৃষ্ণ, যদি কর্ম অপেক্ষা জ্ঞান বড় হয় তবে তুমি আমাকে যুদ্ধ করতে বলছ কেন?১
তোমার দুই প্রকার কথায় আমার মন মোহিত হচ্ছে। যে পথে আমার মঙ্গল হবে সেই পথটি আমাকে বল।২
শ্রীকৃষ্ণ বললেন- হে অর্জুন, জ্ঞানীদের জ্ঞান ও কর্মীদের কর্ম- এই দুই প্রকার নিষ্ঠার কথা তোমাকে পূর্বে বলেছি।৩
কর্ম না করে কেউ কর্ম বন্ধন হতে মুক্ত হতে পারে না। কর্ম ত্যাগ করলেই সিদ্ধি লাভ হয়না।৪
কর্ম না করে কেউ ক্ষণকালও থাকতে পারে না। জীব প্রকৃতির প্রভাবেই কাজ করতে বাধ্য হয়।৫
যে ব্যক্তি ইন্দ্রিয় সংযত রেখেও বিষয়ের চিন্তা করে, সে ব্যক্তি মূর্খ। সকলে তাকে মিথ্যাচারী বলে থাকে।৬
হে অর্জুন যে ব্যক্তি ইন্দ্রিয় সংযত অথচ যিনি ফলাকাঙ্ক্ষী নন, সেই কর্মযোগীই প্রসংশার পাত্র।৭
সর্বদা কর্ম করবে। শরীর রক্ষার জন্যেও কর্ম করা প্রয়োজন।৮
হে অর্জুন, আসক্তি ত্যাগ করে ভগবানের প্রীতির জন্য কর্ম কর। নতুবা বন্ধন ঘটবে।৯
ব্রহ্মা প্রজা সৃষ্ট করে বললেন- \"তোমরা সর্বদা যজ্ঞ করিও। সর্বদা যজ্ঞ করিলে ইষ্ট লাভ হইবে।\"১০
যজ্ঞ দ্বারা দেবগণকে সন্তূষ্ট কর। তাতে ইষ্ট লাভ হবে।১১
দেবগণের পূজা করলে দেবগণ ইষ্ট প্রদান করে থাকেন। যে দেবগণের পূজা করে না সে চোরের তুল্য।১২
যজ্ঞান্ন খেয়ে লোকে পাপ মুক্ত হয়। যে রান্না করে কেবল নিজের উদরই পূর্ণ করে, সে পাপাহার করে।১৩
যজ্ঞ কর্মময়। যজ্ঞ হতে মেঘ হয়, মেঘ হতে অন্ন ও অন্ন হতে জীবের জন্ম হয়।১৪
কর্ম দেবাশ্রিত ব্রহ্ম হতে বেদের সৃষ্টি। সর্বব্যাপী ব্রহ্ম যজ্ঞে প্রতিষ্ঠিত থাকেন।১৫
যে ব্যক্তি কর্মের অনুষ্ঠান করে না, সে পাপী ও ইন্দ্রিয়াসক্ত। তার জীবন বৃথা।১৬
যে ব্যক্তি আত্মাতেই সন্তুষ্ট থাকে তার কর্তব্য বলে কিছু থাকে না।১৭
সেই ব্যক্তির কর্মে বা অকর্মে পাপ পুন্য কিছুই হয় না। সেই ব্যক্তি সিদ্ধ লাভের জন্য অন্যের আশ্রয় নিতে চায় না।১৮
হে অর্জুন- তুমি আসক্তি ত্যাগ করে কর্ম কর। অনাসক্ত ব্যক্তি মোক্ষ লাভ করে।১৯
জনাকাদি মুনিগণ নিজ নিজ কর্তব্য করেই সিদ্ধি লাভ করেছিলেন। অতএব তোমার নিজ কর্তব্য করা উচিত।২০
শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি যা করেন, সাধারণ মানুষ তা অনুসরণ করে।২১
হে অর্জুন, ত্রিভূবনে আমার কোন কর্ম নাই, প্রাপ্যও নাই। তবু আমি কর্ম করে থাকি।২২
আমি কর্ম না করলে জনগণ আমার অনুসরণ করবে না। তারাও আর কর্ম করবে না।২৩
তখন লোকে কর্মহীন হয়ে উচ্ছন্নে যাবে, প্রজা নষ্ট হবে। ফলে আমি সঙ্করের কারণ হব।২৪
অজ্ঞান ব্যক্তি ফল লাভের আশায় কর্ম করে। আর জ্ঞানী ব্যক্তি ফলের আশা ত্যাগ করে লোক শিক্ষার জন্য কর্ম করে।২৫
জ্ঞানী ব্যক্তি মুখে কিছু না বলে কর্ম করে যাবেন। নিজে কর্ম করে তিনি ফলাসক্ত অজ্ঞান ব্যক্তিকেও কর্মে নিয়োজিত করবেন।২৬
প্রকৃতির গুণে কর্ম করা হয়। অথচ অজ্ঞান ব্যক্তি বলে, \"আমি কর্ম করি।\"২৭
অজ্ঞান ব্যক্তি প্রকৃতির প্রভাবে মুগ্ধ থাকে। জ্ঞানী ব্যক্তি তাকে বিচলিত করবেন না।২৮
হে অর্জুন, সর্ব কর্ম আমাকে সমর্পণ করে এবং কামনাহীন ও মমতাহীন হয়ে তুমি যুদ্ধ কর।২৯
আমার বাক্যে শ্রদ্ধাবান হয়ে কর্ম করেও কর্মী চিরদিন মুক্ত থাকে।৩০
যে আমার বাক্য পালন করে না বরং আমার দোষ ধরে, সে অজ্ঞান ব্যক্তি, অবিবেকী। তাকে নষ্ট বলে জানবে।৩১
জ্ঞানী ব্যক্তিও প্রকৃতির প্রভাবে চালিত হয়। কামনাশূন্য না হলে ইন্দ্রিয় দমন করে কী লাভ?৩২
প্রাণিগণ প্রকৃতির অনুসরণ করে। জ্ঞানবান ব্যক্তিও নিজের প্রকৃতির অনুরূপ কর্ম করে থাকেন।৩৩
বিষয়ের ভোগের দ্বারা ভোগের বাসনা বাড়ে, কমে না। এতে মুক্তি নষ্ট হয়।৩৪
নিজ ধর্ম দোষযুক্ত হলেও পর ধর্ম হতে শ্রেষ্ঠ। নিজ ধর্মে মৃত্যু হলেও ভালো।৩৫
অর্জুন বললেন- হে কৃষ্ণ, অনিচ্ছুক ব্যক্তি পাপ করে কেন? তাকে পাপ করায় কে?৩৬
শ্রীকৃষ্ণ বললেন- হে অর্জুন, কাম ও ক্রোধ দুইটি দুর্জয় রিপু। রজোগুণ হতে এদের উত্পত্তি। এরা মোক্ষের বিরোধী।৩৭
যেমন মল দর্পণকে, ধুম অগ্নিকে, জরায়ু গর্ভকে ঢেকে রাখে, কামও সেইরূপ জ্ঞানকে ঢেকে রাখে।৩৮
হে অর্জুন কাম জ্ঞানীর চিরশত্রু। এটি জ্ঞানীর জ্ঞান ঢেকে রাখে।৩৯
মন, বুদ্ধি ও ইন্দ্রিয়, এরা কামনার স্থান। কাম এই সকলকে আশ্রয় করে মানুষের জ্ঞানকে আচ্ছন্ন করে রাখে।৪০
হে অর্জুন, আগে ইন্দ্রিয় সংযত কর। তবেই কামকে জয় করতে পারবে।৪১
ইন্দিয়সকল বড়। ইন্দ্রিয়সকল অপেক্ষা মন বড়। মন অপেক্ষা বুদ্ধি বড়। বুদ্ধি অপেক্ষা আত্মা বড়।৪২
হে অর্জুন, আত্মা সর্বশ্রেষ্ঠ। এটি বুঝে স্থির মনে কামরিপুকে দমন কর।৪৩
* কর্মযোগ সমাপ্ত *
Home
Log in