Old school Swatch Watches
religion.mywibes.com
~* ওঁ নম ভগবতে বাসুদেবায় *~
শ্রীমদ্ভগবদগীতা
দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ সাংখ্যযোগ শ্লোক ৭২
সঞ্জয় বললেন- অর্জুনকে শোকাকুল, দুঃখিত ও অশ্রুসিক্ত দেখে শ্রীকৃষ্ণ বললেন।১ শ্রীকৃষ্ণ বললেন- হে অর্জুন, এই বিপদের সময় তোমার এরূপ মোহের উদ্ভব হল কেন? এ তো আর্যজনোচিত নয়। বরং অতিশয় নিন্দনীয়।২ হে অর্জুন, মোহ ত্যাগ কর। দুর্বলতা দূর কর। এরূপ দুর্বলতা তোমার সাজে না।৩ অর্জুন বললেন- হে কৃষ্ণ, যুদ্ধক্ষেত্রে পূজ্যপাদ ভীষ্ম ও দ্রোণের প্রতি আমি কীরূপে বাণ নিক্ষেপ করব?৪ আমি গুরুজনদেরকে হত্যা করব না। তাঁদের রক্তে রঞ্জিত রাজ্যও ভোগ করব না। বরং আমি ভিক্ষান্ন খেয়ে জীবন ধারণ করব।৫ অবাধ্য আত্মীয়স্বজনগণ যুদ্ধক্ষেত্রে বিপক্ষে দাঁড়িয়ে আছেন। জয় এবং পরাজয়- এদের কোনটি আমার পক্ষে মঙ্গলজনক তা বলুন।৬ অজ্ঞান আমি কুল নাশের ভয়ে ভীত। আমি তোমার শিষ্য ও শরণাপন্ন। আমাকে বিহিত উপদেশ দাও।৭ নিষ্ককণ্টক রাজ্য কিংবা স্বর্গের রাজত্ব পেলেও আমার শান্তির পরিবর্তে অশান্তিই ঘটবে।৮ সঞ্জয় বললেন- শ্রীকৃষ্ণকে অর্জুন \"আমি যুদ্ধ করব না\" এই কথা বলে চুপ করে রইলেন।৯ তখন শ্রীকৃষ্ণ বিষণ্ণ অর্জুনকে প্রসন্নবদনে বললেন।১০ শ্রীকৃষ্ণ বললেন- হে অর্জুন, যাদের জন্য শোক করা উচিত নয় তুমি তাদের জন্যই শোক করছ; অথচ জ্ঞানীর মত কথা বলছ। জ্ঞানী ব্যক্তি মৃত বা জীবিতের জন্য কখনো শোক করেন না।১১ এই রাজগণ, তুমি ও আমি- আমরা সকলেই পূর্বে ছিলাম, এখনো আছি, পরেও থাকব।১২ মানুষের দেহে শৈশব, যৌবন ও বার্ধক্য যেভাবে আসে মৃত্যুও সেভাবে আসে। জ্ঞানী ব্যক্তি তাতে শোক করেন না।১৩ শীত, উষ্ণ, সুখ, দুঃখ, প্রভৃতি বিষয়জনিত ও অনিত্য। এরা আসে যায়। হে অর্জুন, তুমি এই সব সহ্য কর।১৪ যে ব্যক্তি এই সকলে বিচলিত হন না, তিনি মোক্ষ লাভ করতে পারেন।১৫ অসত্‍ বস্তু স্থায়ী হয় না। স্থায়ী বস্তু বিনষ্ট হয় না। জ্ঞানী ব্যক্তি এই তত্ত্ব অবগত থাকেন।১৬ আত্মা অবিনাশী ও সর্বব্যাপী। কেউ তা বিনাশ করতে পারে না।১৭ দেহ অনিত্য কিন্তু আত্মা নিত্য। হে অর্জুন, এটি স্মরণ করে যুদ্ধ কর।১৮ যে ব্যক্তি বলে যে, আত্মহত্যা করেন কিংবা হত হন, আত্মা যে সর্বব্যাপী তা সে জানে না।১৯ আত্মার জন্ম নেই, মৃত্যু নেই, ক্ষয় নাই, বৃদ্ধি নেই। শরীর নষ্ট হলেও আত্মা নষ্ট হয় না।২০ যে ব্যক্তি আত্মাকে অবিনাশী বলে জানে, সে ব্যক্তি কাউকেও হত্যা করতে বা হত্যা করাতে পারে না।২১ মানুষ যেমন জীর্ণ বস্ত্র ত্যাগ করে নতুন বস্ত্র পরিধান করে, আত্মাও সেরকম জীর্ণ শরীর ত্যাগ করে নতুন শরীর গ্রহণ করে।২২ অত্মাকে অস্ত্র দিয়ে কাটা যায় না, আগুনে পোড়ান যায় না, জলে ভিজান যায় না, বাতাসে শুকান যায় না।২৩ আত্মা কখনও ছিন্ন, দগ্ধ, সিক্ত ও শুষ্ক হয় না। অত্মা সর্বব্যাপী, স্থির, অচল ও সনাতন।২৪ অতএব অব্যক্ত, অচিন্ত্য, নিত্য ও নির্বিকার আত্মার জন্য শোক করা তোমার উচিত নয়।২৫ আর তুমি যদি মনে কর যে, আত্মা দেহের সাথে জন্মে ও দেহের সাথে বিনষ্ট হয়, তবু আত্মার জন্য শোক করা তোমার উচিত নয়।২৬ জন্মের পর মৃত্যু, মৃত্যুর পর জন্ম- এটি নিশ্চিত। এটি জেনেও তোমার শোক করা উচিত নয়।২৭ পূর্বজন্ম ও পরজন্মের কথা বলা যায় না। এই জন্মের অবস্থাই কেবল বলা যায়।২৮ আত্মা কীরূপ তা বুঝা সহজ নয়। সকলের নিকটই আত্মা আশ্চর্য কিছু।২৯ আত্মা প্রতি শরীরেই অবস্থিত আছেন। তিনি অবাধ্য। অতএব কারো জন্যেই শোক করা উচিত নয়।৩০ হে আর্জন, তুমি ক্ষত্রিয়। ধর্মযুদ্ধই ক্ষত্রিয়ের কর্তব্য। এটা তোমার তোমার স্বধর্ম।৩১ যে ক্ষত্রিয় এইরূপ ধর্মযুদ্ধ করে থাকেন, তিনি ভাগ্যবান, তিনি মুক্ত। তিনি স্বর্গলাভ করে থাকেন।৩২ তুমি যদি এই ধর্মযুদ্ধ না কর তবে তোমার স্বধর্ম ও কীর্তি নষ্ট হবে, তোমার পাপ হবে।৩৩ তথন তোমার দুর্নাম হবে। দুর্নাম অপেক্ষা মাননীয় মৃত্যু শ্রেয়ঃ।৩৪ যেসকল বীর এখন তোমাকে সম্মান করে তখন ভীরু, কাপুরুষ- এই বলে তোমাকে উপহাস করবে।৩৫ শত্রুগণও তোমার নিন্দা করবে। এটা অপেক্ষা দুঃখের আর কী হবে?৩৬ এই ধর্মযুদ্ধে যদি তোমার মৃত্যু হয় তবে তুমি স্বর্গ পাবে, আর এই যুদ্ধে যদি জয়লাভ কর তবে তুমি পৃথিবী ভোগ করবে। অতএব হে অর্জুন, যুদ্ধের জন্য কৃতসংকল্প হও।৩৭ সুখ-দুঃখ, লাভ-আলাভ ও জয়-পরাজয় সমান মনে করে তুমি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও।৩৮ এতক্ষণ তোমাকে আত্মতত্ত্ব সম্পর্কে বললাম। এখন নিষ্কাম কর্ম সম্পর্কে বলছি, শ্রবণ কর।৩৯ নিষ্কাম কর্ম কখনো নিষ্ফল হয় না, যতটুকু করা যায় ততটুকুই সার্থক হয়।৪০ হে অর্জুন, নিষ্কাম কর্মী স্থিরচিত্ত, একনিষ্ঠ। আর সকামকর্মী অস্থিরচিত্ত। তার কামনাও বহু।৪১ বেদোক্ত কর্মসকল সকাম কর্ম। বেদে সকাম কর্ম ভিন্ন অন্য কিছু করার নেই।৪২ বেদোক্ত কর্মের লক্ষ্য স্বর্গপ্রাপ্তি। বেদবাদী তার কর্মের দ্বারা পুনর্জন্ম লাভ করে থাকেন।৪৩
বৈদিক কর্মকারীর কাম্য কেবল ভোগ, তাই বৈদিক কর্ম করে কেও ঈশ্বরে একনিষ্ট হতে পারে না।৪৪ বেদ ত্রিগুণবিষয়ক- হে অর্জুন, তুমি গুণাতীত হও।৪৫ জলপূর্ণ স্থানে যেরূপ কূপের প্রয়োজন হয় না, সেরূপ ব্রহ্মজ্ঞানী ব্যক্তিরও বেদের প্রয়োজন নেই।৪৬ কর্মেই তোমার আধিকার, কর্মফলে অধিকার নেই।৪৭ অতএব কর্মফলের আশা না করে তুমি কর্ম করে যাও। ফলাফল সমজ্ঞানই যোগ।৪৮ সকাম কর্ম নিকৃষ্ট, নিষ্কাম কর্ম শ্রেষ্ঠ। হে অর্জুন, যে ব্যক্তি ফলের আকাঙ্ক্ষায় কর্ম করে সে নিকৃষ্ট।৪৯ জ্ঞানী ব্যক্তি পাপপুণ্যত্যাগী। কর্মের কৌশলকেই যোগ বলে। হে অর্জুন, তুমি যোগী হও।৫০ জ্ঞানীগণ কখনো কর্মফল চান না। তাঁরা কর্মের বন্ধন হতে মুক্তি লাভ করেন।৫১ নিষ্কাম কর্ম করতে করতে বাসনা দূর হবে। বাসনা দূর হলে মন স্থির হবে।৫২ নিষ্কাম কর্মের দ্বারা যখন তোমার মন স্থির হবে তখনই অভ্যাস বশে তোমার যোগ লাভ হবে।৫৩ অর্জুন বললেন- হে কৃষ্ণ, স্থিরবুদ্ধি ব্যক্তি বলতে কাকে বুঝায়? তার লক্ষণ কী? সে কীরূপে কার্যাদি করে?৫৪ শ্রীকৃষ্ণ বললেন- যিনি সমস্ত কামনা-বাসনা ত্যাগ করে সর্বদা সন্তুষ্ট থাকেন তিনিই স্থিরবুদ্ধি।৫৫ যিনি সুখ, দুঃখ, ভয়, ক্রোধ কিছুতেই বিচলিত হন না তিনিই স্থিরবুদ্ধি।৫৬ যিনি শুভ ও অশুভ কিছুতেই বিচলিত হন না এবং যিনি আসক্তিশূন্য তিনিই স্থিরবুদ্ধি।৫৭ যিনি কচ্ছপের মত নিজের ইন্দ্রিয়গণকে সংকুচিত রাখেন সেই সংযত ব্যক্তিই স্থিরবুদ্ধি।৫৮ ইন্দ্রিয়ের দ্বারা বিষয় ভোগ না করলেই বিষয়-তৃষ্ণা দূর হয় না। পরম পুরুষকে দেখে যাঁর বিষয় বাসনা দূর হয়, তিনিই স্থিরবুদ্ধি ব্যক্তি।৫৯ হে অর্জুন, ইন্দ্রিয়গণকে জয় করা সহজ নয়। তারা সকলে বিবেকী ব্যক্তির চিত্তকে বিষয়ে আকৃষ্ট করে।৬০ মত্‍পরায়ণ হয়ে ইন্দ্রিয় সংযম কর। জিতেন্দ্রিয় ব্যক্তিই স্থিরবুদ্ধি হয়ে থাকেন।৬১ বিষয়ের চিন্তা করলে আসক্তি জন্ম। আসক্তি হতে কাম, কাম হতে ক্রোধ জন্মে।৬২ ক্রোধ হতে মোহ জন্মে। মোহ হতে স্মৃতিনাশ হয়। স্মৃতিনাশ হলে বুদ্ধিনাশ হয়। বুদ্ধিনাশ হলে বিনাশ ঘটে।৬৩ জিতেন্দ্রিয় ব্যক্তি বিষয়ে থেকেও আত্মপ্রসাদ লাভ করে থাকেন।৬৪ আত্মপ্রসাদ লাভ হলে সকল দুঃখ দূর হয়। দুঃখ দূর হলে স্থিরবুদ্ধি প্রকাশিত হয়।৬৫ যার চিত্ত সংযত এবং চিত্ত প্রসন্ন নয়, তার সুখ শান্তি লাভ হয়।৬৬ বাতাস যেমন সমুদ্রে নৌকা ডুবিয়ে দেয়, সেরূপ ইন্দ্রিয়গণও অসংযত ব্যক্তির মন হরণ করে থাকে।৬৭ ইন্দ্রিয়গণ সর্বপ্রকারের বিষয় হতে নিবৃত্ত হলে মন স্থির থাকে।৬৮ আত্মদর্শী ব্যক্তি যাতে জাগ্রত থাকেন, বিষয়ী ব্যক্তি তাতে নিদ্রিত থাকে। বিষয়ী ব্যক্তি যাতে নিদ্রিত থাকে, আত্মদর্শী ব্যক্তি তাতে জাগ্রত থাকেন।৬৯ সমুদ্র মধ্যে যত নদীই প্রবেশ করুক না কেন সমুদ্র স্থিরই থাকে। সেই যোগী ব্যক্তি সকল কামনার মধ্যেও স্থির থাকেন, কিন্তু কামনাপরায়ণ ব্যক্তি স্থির থাকতে পারে না।৭০ যিনি কামনা ত্যাগ করেন তিনি নিঃস্পৃহ। নিঃস্পৃহ ব্যক্তি শান্তি লাভ করেন।৭১ হে অজুন, এটিই ব্রাহ্মীস্থিতি (অর্থাত্‍ ব্রহ্মজ্ঞানে অবস্থান)। এই অবস্থা প্রাপ্তিতে মোহ দূর হয়ে মোক্ষ লাভ হয়।৭২
Home
Log in